ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে ‘বাংলাদেশ করতে পারে’ এমন ধারণা তৈরি হয়েছে, যা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে নিজেরাও পারে সে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদাকে উজ্জ্বল করেছে। আর এটা আমরা করতে পেরেছি আত্মবিশ্বাসের জন্য।
বুধবার জাতীয় সংসদে পদ্মাসেতু নির্মাণ ও দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামোর উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে আনিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি পদ্মাসেতু আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। টেকনোলজি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞান বেড়েছে। আমরা ভবিষ্যতে আরো অনেক উন্নত কাজ করতে পারবো। পৃথিবীতে এই ধরনের বিশাল স্ট্রাকচারের সেতু আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। এত রক্ত কোনোদিন বৃথা যেতে পারে না।
’৭৫ থেকে ’৯৬ এবং পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমাদের একটা খারাপ সময় গেছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পর থেকে ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে উন্নয়ন করতে পারছি এবং পদ্মাসেতুও করতে পেরেছি।
সেতুর মূল নকশা, নদীর নাব্যতা, নদীর তলদেশের বৈচিত্র্য, সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত করা, রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধক স্থাপন, দ্বিতল এই সেতুর ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের তিনগুণ অর্থ প্রদান এবং বছর বছর নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির বিভিন্ন উদাহরণ টেনে এর ব্যয় নিয়ে ঢালাও ভাবে সমালোচনাকারীদের মনমানসিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন। একে হীনমন্যতা আখ্যায়িত করে ব্যক্তি স্বার্থে তাদের এ ধরনের সমালোচনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পাহাড়ের ওপর ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতুর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যদের তুলনার উত্তর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ড. ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদটি রক্ষার লোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে এই পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধ করান। তারা ভেবেছিলেন যে, আমরা সারেন্ডার করবো। কিন্তু আমি যে শেখ মুজিবের মেয়ে এটা তাদের মনে রাখা উচিত ছিল। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করবো না। এই দেশ এবং দেশের মানুষকে আমি ভালোবাসি। কাজেই এদেশের মানুষের মাথা নিচু হবে এমন কাজ কোনোদিনও করবো না।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য সংকটের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সাশ্রয়ী এবং মিতব্যয়ী হওয়ারও পরামর্শ দেন। পাশাপাশি দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখায় তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।