HeRa প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল, ২০২২, ১১:০৪ পিএম
রহমতের সিয়াম সাধনা
রমজান হচ্ছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ রমজানের কারণে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে অগণিত সওয়াব দান করবেন। আল্লাহর রয়েছে অসংখ্য গুণ। সেই অগণিত গুণের মধ্যে একটি গুণ হলো রহমত। যা বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ। কোরআন ও হাদিসের বহু জায়গায় তাঁকে রহমান ও রহিম নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দয়ামায়া ও অনুকম্পায় তিনি অতুলনীয়। কোরআনের সাথে এই রহমান ও রহমত শব্দদ্বয়ের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে কোরআনের শুরু থেকে বহু জায়গায় এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
রহমত আল্লাহর বিশেষ গুণ। এই বিশেষণে এভাবে অন্য কাউকে বিশেষায়িত করা যায় না। রহমান হলো পরম করুণাময়। যা কেবল আল্লাহর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দুনিয়ায় বসবাসকারী সকল মানুষ, মুসলমান-অমুসলমান সবার উপর তিনি রহমত বর্ষণ করেন। যে তাঁকে মানে আর যে মানে না সবার জন্যই তিনি উদার। রহমান হলেন তিনি, যিনি তাঁর দয়া ও রহমত থেকে মানুষকে বঞ্চিত না রেখে শুধুই অনুগ্রহ করেন।
অন্যদিকে আল্লাহর অতি পরিচিত একটি গুণবাচক নাম রহিম। যার অর্থ অতিশয় মেহেরবান। আল্লাহর এই গুণটি শুধু মুমিন-মুসলমানের জন্য নির্ধারিত। এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। পরকালে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাথে এটির প্রকাশ করবেন। দুনিয়ায় যারা ইসলামের হুকুম-আহকাম মেনে নবি করিম সা: এঁর আদর্শের অনুসারী হয়েছে, মৃত্যুর পর এঁরাই কবর, মিজান, পুলসিরাত ও হাশরের ময়দানে আল্লাহর রহিম নামক বিশেষ দয়া লাভ করবে।
রমজানকে তিনটি দশকে ভাগ করা হয়েছে। যার প্রথম দশক রহমতের। আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য গুণের অধিকারী। যে গুণের সমতুল্য বা নিকটতম অবস্থানে মানুষের পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবুও মানুষ যেন তাঁর এই গুণে গুণান্বিত হয় ও অন্য মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে এটিই তাঁর নির্দেশনা। এ সম্পর্কে আল কোরআনে বলা হয়েছে,‘আসল রং হচ্ছে আল্লাহর, এমন কে আছে যার রং আল্লাহর চেয়ে উৎকৃষ্ট হতে পারে?’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত : ১৩৮)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন,‘তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও।’ (তিরমিজি)।
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। এই মানুষের ভিতর থেকেই কিছু মানুষকে আল্লাহ তায়ালা বেছে নিয়ে। করেছেন নবি-রাসূলদের উত্তরসূরি। তাঁদের কাঁধে তুলে দিয়েছেন খেলাফতের দায়িত্ব। এইসব মানুষগুলোকে আল্লাহর জমিনে প্রতিনিধিত্ব করতে হলে অবশ্যই উত্তম গুণের অধিকারী হতে হবে। আর এমন গুণ অর্জন করতে হলে সেগুলো হতে হবে আল্লাহর সেফাতি গুণ থেকে। এজন্য হাদিস শরিফে বলা হয়েছে,‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিরানব্বইটি গুণবাচক নাম রয়েছে, যাঁরা এগুলো আয়ত্ত করবে, তাঁরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম)।
আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়ার অর্থ- আল্লাহর যেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে ব্যক্তি নিজের কাজেকর্মে ও আচারআচরণে তার প্রকাশ ঘটাবে। আর ঐসব গুণের অধিকারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে। আল্লাহ মানুষের প্রতি সবসময় দয়া করেন। মানুষের প্রতি মানুষের অনুগ্রহ করাও আল্লাহর পছন্দনীয় বিষয়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘দয়ার পুরস্কার দয়া ছাড়া আর কী হতে পারে?’ (সুরা আর রাহমান, আয়াত : ৬০)।
বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত সবসময় বর্ষিত হয়। তবে রমজানে এর ব্যাপকতা অন্য মাসের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পায়। এমনকি এই মাসের বরকতে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করা হয় জাহান্নামের দরজা। আর শয়তানকে শৃঙ্খল পরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে মানুষ একাগ্রতার সাথে ইবাদতে মশগুল হতে পারে। শয়তান কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারে না।
এই মাসের ফজিলত ও তাকওয়া অর্জনের জন্য বেশি বেশি দান-সদকা করা প্রিয় নবির সুন্নত। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবথেকে বড় দানশীল। তবুও যখন রমজান আসত, হজরত জিবরাইল আ: প্রতি রাতে তাঁর কাছে আসতেন। হজরত জিবরাইল আ: নবীজিকে কোরআন পড়ে শুনাইতেন, নবি করিম সা: রমজান মাসে প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষা অধিক হারে দান-সদকা ও নেক আমল করতেন।
আল্লাহর রহমত পেতে মানুষের প্রতি রহম করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি দয়া করো। আসমানওয়ালাও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (বুখারি)। সুতরাং রমজান থেকে সংযম ও আত্মত্যাগের শিক্ষা নিতে হবে। আর তাকওয়া অর্জনের জন্য এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে।